রিসালা-ই-নুর অনুসরণে কীভাবে শান্তি ও সম্প্রীতিপূর্ণ জীবনযাপন করা যায়, তার প্রচারে বাংলাদেশের সহযোগিতা চায় তুরস্ক। এর প্রথম ধাপ হিসেবে গতকাল সোমবার থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নবাব নওয়াব আলী চৌধুরী সিনেট ভবনে দুই দিনব্যাপী আন্তর্জাতিক সম্মেলন শুরু হয়েছে। দ্য ইস্তানবুল ফাউন্ডেশন ফর সায়েন্স অ্যান্ড কালচার ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আরবি বিভাগ ছিল ওই সম্মেলনের আয়োজক।
তুরস্কের ইসলামি চিন্তাবিদ সাইদ নুরসি (১৮৭৭-১৯৬০) পবিত্র কোরআনের ব্যাখ্যা-সংবলিত বই লিখেছেন। এই বইগুলোকে রিসালা-ই-নুর বলা হয়ে থাকে। বিশ্বের ৪৯টি ভাষায় রিসালা-ই-নুর অনূদিত হয়েছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আয়োজিত সম্মেলনে গতকাল যুক্তরাজ্যের ডারহাম বিশ্ববিদ্যালয়, সিঙ্গাপুর ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি, মালয়েশিয়ার ইন্টারন্যাশনাল ইসলামিক ইউনিভার্সিটি ও ভারতের আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপকেরা অংশ নেন।
আলোচনায় অংশগ্রহণকারীরা সাইদ নুরসির শিক্ষা ব্যাখ্যা করতে গিয়ে বলেন, বহুমতকে তিনি ঘৃণার দৃষ্টিতে দেখেননি। তিনি ইসলাম ধর্মের অনুসারীদের মধ্যে মাজহাব নিয়ে বিরোধও পছন্দ করতেন না। তিনি বলে গেছেন, ‘আমার রাস্তাই একমাত্র সঠিক ও সত্য, অন্যটি নয়’ কিংবা ‘উৎকর্ষ ও সৌন্দর্য শুধু আমার তরিকাতেই আছে, অন্যটির মধ্যে নেই’ এমন বক্তব্য অন্যের পথ, পন্থা ও পদ্ধতিকে মিথ্যা ও বাতিল বলে ঘোষণা দেয়। এমন কথা কখনোই বলা উচিত নয়।
বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের চেয়ারম্যান আবদুল মান্নান বলেন, সাইদ নুরসি যেকোনো বিষয়ে ‘সংলাপ’-এর কথা বলে গেছেন। তিনি জিহাদের কথা বলেছেন, কিন্তু সেটা সংলাপের জিহাদ, ভিন্নমতের জন্য কাউকে হত্যা করা জিহাদ নয়।
তুরস্কের সাংসদ ও ইস্তানবুল ফাউন্ডেশন ফর সায়েন্স অ্যান্ড কালচারের পরিচালক সাইত ইউসে বলেন, বেদিউজ্জামান সাইদ নুরসি বর্তমান প্রেক্ষাপটে অনেক বেশি প্রাসঙ্গিক। কারণ, মানুষ এখন বহুমুখী সমস্যায় ভুগছে। সাইদ নুরসি তাঁর রিসালা-ই-নুরে বলেছেন, ধ্বংসের পথ কখনো মঙ্গল ডেকে আনেনি। ধ্বংস ও মূলোৎপাটনের পরিবর্তে সংশোধন ও পুনর্নির্মাণের পথ মানুষকে দুনিয়া ও মৃত্যু-পরবর্তী জীবনে ভালো রাখতে পারে।
ইন্টারন্যাশনাল ইসলামিক ইউনিভার্সিটি, মালয়েশিয়ার সহকারী অধ্যাপক এলমিরা আখমেতোভা বলেন, সাইদ বলেছেন মুসলমানদের শত্রু হলো অজ্ঞতা, অভাব-অনটন ও অনৈক্য। তাঁর মতে, জ্ঞান-বিজ্ঞান, শিল্প, ঐক্য ও প্রযুক্তির মাধ্যমে এই শত্রুদের পরাজিত করা সম্ভব।
অনুষ্ঠান শেষে তুরস্কের সুলেইমান ডেমিরেল ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক ইশাক ওযগেল বলেন, তাঁরা এই প্রথম রিসালা-ই-নুর সম্মেলনের জন্য বাংলাদেশকে আহ্বান জানালেন। তাঁরা উত্তরায় একটি শাখা খুলেছেন। সেখান থেকে নানা প্রকাশনা প্রচারও করা হচ্ছে। অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে আরও বক্তব্য দেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য মো. আকতারুজ্জামান।